প্রতিনিধি ৬ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৭:২৩:৫৬ প্রিন্ট সংস্করণ
সংবাদমাধ্যমের মূল দায়িত্ব সত্য তুলে ধরা। যখন কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি, অপরাধ বা অস্বাভাবিক ঘটনা প্রকাশ পায় তখন স্বাভাবিক নিয়মে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর নড়েচড়ে বসার কথা। কিন্তু বাস্তব চিত্রটি প্রায়ই ভিন্ন। মনে হয়, সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে কিছু কর্মকর্তা উল্টো এক ধরনের দুর্ভাগ্যজনক খেলায় নেমে পড়েন।

শুরু হয় তদবির, সম্পর্ক রক্ষা আর সুবিধার লেনদেন। অভিযোগ ওঠে, অনিয়ম যেই করুক না কেন, সংবাদ প্রকাশের পরে অভিযুক্তরা অনেক সময় আরও বেশি ‘বেনিফিটেড’ হয়ে যায়। দপ্তরের দরজায় গিয়ে কয়েকজন কথাবার্তা বলে এলে, সবকিছু যেন সহজ হয়ে ওঠে। তদন্তের গতি কমে আসে, কার্যক্রমে গরিমসি দেখা যায়, আর সময়ক্ষেপণের মধ্যেই ধামাচাপা পড়ে যায় আসল ঘটনাগুলো।
এ যেন এক অদ্ভুত প্রবণতা- সত্য প্রকাশিত হলে অপরাধীরা চিন্তা করে না। উল্টো সংবাদকর্মীরাই ভয় পায়, আর কর্মকর্তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েন ‘মিটমাটের’ ফর্মুলা খুঁজতে।
সাধারণ মানুষ কষ্টে থাকে, আক্রান্ত মানুষ ন্যায়বিচার চায়, সমাজ আশা করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে। অথচ কিছু দপ্তরে দেখা যায় এর উল্টো। সংবাদে উল্লেখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান হওয়া তো দূরের কথা- বরং কর্মকর্তাদের টেবিলে ফাইল রেখে দেওয়া হয় ‘পরবর্তী নির্দেশ’ আসা পর্যন্ত। এর নামই এখন “গরিমসি”, যা কাজে না লাগলেও অপরাধ ঢেকে দিতে দারুণ কার্যকর।
ফলে দুর্নীতি রয়ে যায় অন্ধকারে, অনিয়মের শিকড় আরও গভীরে যায়, অপরাধীরা নতুন শক্তি পায়। আর জনগণের চোখে আস্থা কমে যায় সেই দপ্তরগুলোর প্রতি, যাদের ওপরই দায়িত্ব ছিল আইন প্রয়োগ ও শুদ্ধি আনার।
সাংবাদিকরা যখন নির্ভীকভাবে সত্য প্রকাশ করেন, তখন তাদের প্রত্যাশা একটাই, দপ্তরগুলো যেন দায়িত্ব পালন করে, জনগণের স্বার্থ রক্ষা করে, সঠিক তদন্ত করে।
কিন্তু দায়িত্বহীনতার কারণে বারবার দেখা যায় একই দৃশ্য। সংবাদ প্রকাশ পেলেও অপরাধ ধামাচাপা পড়ে, আর সুবিধা পায় অভিযুক্তদের দল।
এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে- ঠিক কাদের জন্য এই দপ্তরগুলো?
সাধারণ মানুষের জন্য, নাকি সুবিধাভোগী প্রভাবশালীদের জন্য?
সত্য চাপা পড়ে থাকতে পারে, কিন্তু বাতাসে তার গন্ধ থাকে। যত ধামাচাপাই হোক, একসময় সত্য বেরিয়ে আসবেই। আর সেই সত্যের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে শুধু সংবাদ। যা কোনো গরিমসি, কোনো তদবির, কোনো সুবিধার বিনিময়ে থামে না।
মারুফ হোসেন, প্রকাশক ও সম্পাদক, আজকের তালাশ।