প্রতিনিধি ৫ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৭:১১:১০ প্রিন্ট সংস্করণ
সাংবাদিকতা মূলত সত্যের অনুসন্ধান। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে সত্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়েও বড় হয়ে উঠছে সত্য প্রকাশের মূল্য দিতে বাধ্য করার চাপ। বহু ক্ষেত্রে সংবাদ সংগ্রহে গেলে প্রথমেই প্রশ্ন আসে “কাজটা বন্ধ রাখলে কত লাগবে?” আবার কেউ তদবির করে চাপ দিলে যদি সাংবাদিক সেটি মানতে না চান, তাহলে গায়ে জোর করে তাকে “চাঁদাবাজ” আখ্যা দেওয়া হয়। আর যদি তদবির মানতে বাধ্য হন, তবে সেই সাংবাদিকতার স্বাধীনতা কোথায় দাঁড়ায়?

এর চেয়েও বড় সংকট হচ্ছে, রাজনৈতিক অভিভাবকদের অযাচিত হস্তক্ষেপ। স্থানীয় থেকে জাতীয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল এখন অনেক জায়গায় সংবাদকে নিয়ন্ত্রণের বস্তু মনে করছে। যেন সংবাদপত্র স্বাধীন মাধ্যম নয়, বরং কারও স্বার্থরক্ষার প্রহরী। ফলে মাঠে নামা একেকজন প্রতিবেদক প্রতিদিন নতুন এক বাস্তবতার মুখোমুখি হন।
সংবাদ লিখলে সমস্যা, না লিখলেও সমস্যা। সত্য প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে আমরা কি সত্যিই মুক্ত সাংবাদিকতার সমাজে বাস করছি? সাংবাদিকতার গায়ে “চাঁদাবাজ” তকমা কার স্বার্থে?
একটি সত্য সংবাদ যদি কারো পছন্দ না হয়, তাকে সহজেই পাল্টা অভিযোগে ঠেকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায়, সাংবাদিক কোনও অনিয়ম দেখতে পেলে তথ্য সংগ্রহের আগেই রাজনৈতিক ক্ষমতা বা অর্থবল ব্যবহার করে তাকে হুমকি দেওয়া হয়। আর যদি সাংবাদিক সত্য প্রকাশে অনড় থাকেন, তখন ব্যক্তিগতভাবে অপবাদ, মামলা, এমনকি শারীরিক হামলার ঝুঁকিও তৈরি হয়।
এই সংস্কৃতি শুধু সাংবাদিক নয়, সমাজের সার্বিক সত্যকেই বিপন্ন করছে।
রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে যে তিনটি বড় ক্ষতি হচ্ছে-
১. সত্য চাপা পড়ে যাচ্ছে।
অনিয়মকারীরা আজ জানে, সাংবাদিককে চাপে ফেলাই হলো প্রথম নিরাপদ উপায়।
২. ভালো সাংবাদিকরা পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন।
ঝুঁকি, লাঞ্ছনা, অপবাদ, এ সব দেখে অনেক যোগ্য মানুষ মিডিয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
৩. জনগণ তথ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
যেখানে স্বার্থের চাপে সংবাদ থেমে যায়, সেখানে জনগণ অন্ধকারে আটকা পড়ে।
সাংবাদিকতার কাজ সত্য বলা, সেটা যতই অস্বস্তিকর হোক। সাংবাদিক একেকজন সমাজের অবহেলিত সত্যের কণ্ঠস্বর। তার কলম কারো বিরুদ্ধে নয়, কেবল অন্যায়ের বিরুদ্ধে। সত্য প্রকাশ করা চাঁদাবাজি নয়, বরং চাপ দিয়ে সত্য চাপা দিতে চাইলে সেটাই প্রকৃত সমাজবিরোধী কাজ। রাজনৈতিক শক্তির কাজ সাংবাদিককে থামানো নয়, বরং তাকে নিরাপদ পরিবেশ দেওয়া, যাতে তথ্য ও সত্য জনগণের কাছে পৌঁছায়।
সাংবাদিকতা চাঁদাবাজি নয়, এটি জাতির বিবেক। সত্যের শক্তিকে ভয় পায় বলেই কেউ কেউ সাংবাদিককে দমাতে চেষ্টা করে। কিন্তু ইতিহাস সবসময়ই দেখিয়েছে, কলমকে থামানো যায়, সত্যকে নয়।
মারুফ হোসেন
প্রকাশক ও সম্পাদক
আজকের তালাশ











